উড়োজাহাজের অভ্যান্তরীণ পরিবেশ

উড়োজাহাজ হচ্ছে বাতাসের চেয়ে ভারী, অথচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম একটি যান, যা আধুনিক যাতায়াত, বাণিজ্যিক পরিবহন এবং সামরিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। ‘উড়োজাহাজ’ শব্দটি এসেছে ‘উড়’ (অর্থাৎ ওড়া) এবং ‘জাহাজ’ (অর্থাৎ জলে ভাসমান যান) শব্দের সম্মিলন থেকে। ইংরেজিতে একে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়— যেমন, আমেরিকা ও কানাডায় “Airplane”, আর যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে “Aeroplane”। এই শব্দদ্বয়ের উৎস গ্রীক শব্দ aéras (বাতাস) এবং গণিতের plane (সমতল তল)।

উড়োজাহাজের অভ্যান্তরীণ পরিবেশ

কেবিনের বায়ুপ্রবাহ ও বিশুদ্ধতা ব্যবস্থাপনা

উড়োজাহাজের কেবিন একটি সম্পূর্ণ সিল করা স্থান, যেখানে বাইরে থেকে কোনো প্রাকৃতিক বায়ু প্রবেশ করতে পারে না। এ অবস্থায় যাত্রীদের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) ধীরে ধীরে কেবিনের বাতাসে জমা হতে থাকে, যা শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

এই সমস্যা সমাধানে প্রতিটি আধুনিক উড়োজাহাজে একটি উন্নত ভেন্টিলেশন ও এয়ার সার্কুলেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত তিনটি প্রধান কাজ করে:

1. কেবিনের দূষিত ও স্থির বাতাস বের করে দেয়।

2. বাইরে থেকে আনা উচ্চচাপ ও শোধিত বিশুদ্ধ বায়ু কেবিনে প্রবাহিত করে।

3. যাত্রীদের উপরিভাগ থেকে তাজা বায়ু সরবরাহ নিশ্চিত করে, যা তাদের আরামদায়ক রাখে।

এই পদ্ধতিতে কেবিনের বাতাস প্রতি ২-৩ মিনিটে একবার সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়, যার ফলে দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণেও যাত্রীরা সতেজ থাকতে পারেন।

তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ

উড়োজাহাজে আরামদায়ক ভ্রমণের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কেবিনের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ। বিমানের জেট ইঞ্জিনের কম্প্রেসার থেকে সংগৃহীত গরম ও সংকুচিত বাতাস বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে এয়ার সাইকেল মেশিন (ACM)-এর মাধ্যমে শীতল, আর্দ্রতাহীন এবং বিশুদ্ধ বাতাসে রূপান্তরিত হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, উড়োজাহাজে ফ্রিয়ন গ্যাস বা কোনো রাসায়নিক কুল্যান্ট ব্যবহার করা হয় না, যেটা সাধারণত ঘরোয়া ও শিল্প শীতাতপ যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। বরং, এয়ার সাইকেল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাজ করে।

কেবিনের ভিতরের তাপমাত্রা সাধারণত ২১-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭০–৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর মধ্যে রাখা হয়। কেবিন ক্রু বা স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ইউনিট এই তাপমাত্রা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া প্রতিটি আসনের উপর নির্দিষ্ট করে বায়ুপ্রবাহের নোজল থাকে, যেখান থেকে যাত্রী নিজ ইচ্ছামতো বাতাসের দিক ও প্রবাহ সামান্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রিত ও তদারক করা হয় যাত্রীদের আরাম, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। উন্নত বায়ু পরিশোধন, স্থায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে একটি আধুনিক কেবিন সবসময়ই থাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ।