বাতিল হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো সব প্রটোকল পাস, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের প্রটোকলের জন্য রয়েছে প্রটোকল পাস। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই পাসের অপব্যবহারে ঘটনাও ঘটে । বিমানবন্দরে চোরাচালানে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনেও প্রটোকল পাসধারীদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন। এ কারণে বিমানবন্দরের জন্য নতুন পাস পলিসি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা ১০ হাজার পাস বাতিল করা হবে। পলিসি অনুযায়ী, নির্ধারিত সংখ্যার অতিরিক্ত পাস বরাদ্দ দেওয়া হবে না। স্থায়ী পাস না দিয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে আবেদনের প্রেক্ষিতে সাময়িক পাস দেওয়া হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাতিল হচ্ছে পুরনো সব প্রটোকল পাস
হজরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভিআইপি যাত্রীর প্রটোকলে আসা সিরাজ নামের এক ব্যক্তি বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল দিয়ে দুটি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহ হয় কাস্টম কর্মকর্তাদের। নাকটকীয়ভাবে সিরাজ পালিয়ে গেলেও তার ব্যাগ থেকে ১৬ কেজি ১শ গ্রাম স্বর্ণ, ১০০ মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টম হাউস। সে সময় সিরাজ নিজেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রটোকলের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। সম্প্রতি একটি সংস্থার প্রটোকলের কর্মকর্তা বিমানবন্দরে এসে ডিউটি ফ্রি শপ থেকে মদ নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন।
বিমানবন্দরে এক কর্মকর্তা বলেন, পাস দেওয়া আছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য । যাদের প্রটোকল পাস দেওয়া আছে, দেখা যায় অনেক সময় তারা নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে আসেন। যে প্রতিষ্ঠানের আবেদনে তিনি পাস পেয়েছেন, দেখা যাচ্ছে এর বাইরেও অনেক যাত্রীকে টাকার বিনিময়ে সার্ভিস দিচ্ছে। কেউ কেউ চোরচালানে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করে। আবার বিমানবন্দরে ডিউটি ফ্রি শপ থেকে মদ কিনে নিয়ে বাইরে বিক্রি করার ঘটনাও আছে।
বেবিচকের এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগ দেশের বিমানবন্দরসমূহের নিরাপত্তা পাসের আবেদন, অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনা আরও যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করতে করা হচ্ছে নতুন পাস পলিসি। বাতিল করা হবে পুরাতন প্রায় ১০ হাজার পাস। এছাড়া বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের জন্যও পাস পলিসিতেও পরিবর্তন হচ্ছে।
বিমানবন্দর নিরাপত্তা পাসের অনলাইন আবেদন পোর্টাল চালু করছে। ‘এভসেক আইডি’ নামে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা পাসের আবেদন, অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনা করা হবে। এই পোর্টাল থেকে বিমানবন্দর নিরাপত্তা পাস প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে নিবন্ধন করতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানের দুই জন ব্যক্তি মনোনয়ন পাবেন। তাদের পাঁচ ডিজিটের কোড দেওয়া হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন করে গণহারে পাস ইস্যু করা হবে না। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা, ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নতুন করে প্রটোকল পাস না দেওয়ার কথা ভাবছে বেবিচক। তাদের জন্য টাকার বিনিময়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রটোকল সেবা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ভিআইপি লাউঞ্জ সুবিধাও তারা পাবেন। তবে এই ফি কত হতে পার তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, পাস পলিসি ডিজিটাল করা হচ্ছে। যে কেউ চাইলেই আর পাস দেওয়া হবে না। পুরাতন ১০ হাজার পাস বাতিল করা হবে। পলিসি অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যক্তির বাইরে কেউ বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না। মো. মফিদুর রহমান বলেন, অনেক ব্যবসায়ীরা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ও প্রটোকল সুবিধা নিতে চান। সেক্ষেত্রে তারা নির্ধারিত ফি দিয়ে সেই সুবিধা পেতে পারেন।
আরও দেখুনঃ